'বেড়াল'
গল্পটি 'রাত্রির হৃদয়ে এখন নীল শুঁয়োপোকা'
থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকাশিত হয় 'দ্বৈপায়ন’-এ, ২০০৩-এ। 'ইতিকথা এখন'
(ISSN:2394-1456)-এর বইমেলা-২০১৫ সংখ্যাটিতে বিশিষ্ট কবি বিভাস
রায়চৌধুরী লিখেছেন,"'বেড়াল' গল্পটিকে
অণুগল্প বলব। অণুগল্প কি কেবলই একটি আকার? আমি শুধু বলতে চাই
এত টুকু অতিরিক্ত নেই বলেই এই গল্পটি দীর্ঘস্থায়ী কীর্তি। পাঠককে এই গল্পটি মন
দিয়ে পড়তে অনুরোধ করছি।"
ছোটগল্প
বেড়াল
অমিতকুমার বিশ্বাস
একটা মরাকান্না ফাঁকফোঁকড় সম্বল করে ঘরের দেওয়াল চুঁইয়ে পড়ছে । এ কান্না কিসের? এত করুণই-বা কেন? শ্যামলী আত্মঘাতী হলে তার মা এমনই শেষবার কেঁদেছিল। একমাত্র মেয়েটা ওই শীতের রাতে উঠানের চালতা গাছটাতে অভাবে ঝুলে থাকবে--তার মা ভাবতেই পারেনি ।
আধঘুম থেকে বিছানায় উঠে বসে উৎসব। হাতের কাছের চাদরটা কোনওমতে গায়ে জড়িয়ে ঘরের মেঝেতে দাঁড়ায়। তারপর কি এক অনিবার্য ডাকে সাড়া পেয়ে দরজার দিকে এগোয়। দরজা পেরিয়ে চিলেকোঠা, চিলেকোঠা পেরিয়ে উন্মুক্ত ছাদ। ছাদে আসতেই সে অনুভব করে কান্নাটা তাঁর শরীরের সবকটা রোম খাঁড়া করে দিয়েছে ।
ভোর চারটে। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে আবছা চাঁদের আলো। সদ্য সন্তান হারানো মায়ের ধুমায়মান চোখের মতো কুয়াশা থেকে বিন্দু বিন্দু জল অদ্ভুত এক শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ছে। মৃদু ,অথচ স্পষ্ট। পাতা ,ডাল বা নীড়ে জমা এ জল । মনে হয় এ ক্রন্দসী এক গোপন অভিসন্ধিতে মত্ত --এ তারই ফিসফিসানি। এছাড়া পৃথিবীটা ঘুমিয়েই। মানুষজন,গাছপালা, পশুপাখি--সব। এ অন্য পৃথিবী। অন্য কেউ । জন্ম থেকেই গম্ভীর হয়ে আছে। আর এই নীরবতা ভঙ্গ করে কে কাঁদে? শ্যামলীর মা রাতের অন্ধকারে পথে বসেই মাঝে-মধ্যে হাউমাউ করে কাঁদে । আবার হাসে । সেটা হাসি না কান্না তা বোঝা দায়। সেও তো ক'মাস হল চোখ বুজেছে ! তবে?
ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে অদূরস্থিত ল্যাম্পপোস্টের ধ্যাবড়ানো আলোর নীচে চোখ রাখে উৎসব। পরপর ক'টা টালির বাড়ি। কুয়াশার পিছনে অস্পষ্ট । সেখান থেকেই। সারাদিন মাইক,উলু-শঙ্খধ্বনি, ভিডিও---তারপর ঘুম। চরাচর ঘুমিয়ে।
ঘুমিয়ে থাকে সোমা-রুমা। ভোররাতে ওরা যেন বেশি ঘুমাতে ভালোবাসে ।কেউ জাগালে চটে যায়। ভীষণ। উৎসবের আবার শোওয়া খারাপ। ঘুমের ঘোরে এলোপাথারি হাত-পা ছোঁড়ে। খবরটা ফাস হয়ে যায়। শুনে তো দু'বোন হেসেই খুন ।উৎসব খুব লজ্জা পায়। এক হপ্তা ওবাড়ি মুখো হয়না। মুদীখানার দোকান থেকে নগদ কুড়ি টাকা দিয়ে একটা চটের বস্তা কিনে আনে, তাতে কোমর পর্যন্ত ঢুকিয়ে রাতের পর রাত শুয়ে থাকে,তবু বদ অভ্যাস কিছুতেই যায়না। আজও কি তারা ঘুমিয়ে?ঘোরের মধ্যে?
একটা ট্যাক্সি স্টার্টের শব্দ। কান্নাটা এবারে আরোও তীব্র, তীক্ষ্ণ ।কিছুটা সমবেত। তারই মধ্যে একটা করুণ কন্ঠের আঁচড়ে ফালাফাল হয়ে যাচ্ছে কুয়াশার হৃদয়। এ কান্না সোমার। কাঁদবেই তো। রুমা যে চলে যায় ।মা মারা যাবার পর সেই তো তাকে সন্তানের মতো আগলে রেখেছে। এমন কি উৎসবকেও ।হাতে হাত রেখে উৎসবকে কথা দিয়েছিল,বোনকে সে তাঁর হাতেই তুলে দেবে ।
একটা নারকীয় চিৎকার করে ট্যাক্সিটা কান্না ও উলু-শঙ্খধ্বনিকে পিছনে ফেলে অন্য জগতে অদৃশ্য হয়ে যায় । ম্যাজিক ! শব্দটার ক্রম অবলুপ্তির পরও নিষ্পলক চোখে এক ফোঁটাও জল এল উঁকি দিলনা ।পাথুরে চোখ ।পাথুরে হৃদয় ।পাথুরে শরীর । তবু সেই পাথরের গোপন ফাটল দিয়ে বিষাদের বারিপাত নৈঃশব্দ্যের ঝর্ণাধারায় ছড়িয়ে পড়ে পরিমন্ডলের আনাচে-কানাচে ।একটা ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে ভেসে যায় স্রোতে,একটা অভিমানী প্রণয়মুখর তলোয়ার মুহূর্তেই দু'ফালি করে পৃথিবীটাকে ,একটা পথ যেতে যেতে হঠাৎ কি এক নিষ্ঠুরতায় থমকে দাঁড়ায়,তারপর একটু বাঁক নিয়ে পথিককে সহসা এক চরম শূন্য ছায়াতলে রেখে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুটা চোখরাঙানী ,কিছুটা অহং এর লড়াই,কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি । প্রতিটা শব্দ যেন পিয়ানোর চাবির মতো সাজানো। কে বাজায় ? এত স্পর্ধা কার ? ভিতরটা তোলপাড় হয়ে যায় উৎসবের ।দু'হাতে কান চেপে সে একটা অস্ফূট আর্তনাদ করে,"আঃ"!
দুই
দরজা বন্ধ করে ঘরে আসে উৎসব। আলো জ্বালে ।চোখ ধাঁধিয়ে যায় ।দু'হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢাকবার চেষ্টা করে। যারা অন্ধকারে অভ্যস্ত তাদের ঠিক আলো সহ্য হয়না ।একটা পলায়নবাদী প্রবণতা সংক্রামক রোগের মতো আঁকড়ে ধরে । মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাত সরায় উৎসব। বিছানায় আসে। বালিশে মাথা রাখতেই অবাধ্য সৈনিকের মতো স্মৃতি ঢুকে পড়ে করোটীতে। সহসা কেঁপে ওঠে উৎসব ।চোখ বন্ধ করে। ঠোঁট কাঁপে। বিষাদ সেখানে একটা দৃঢ় চুম্বন রেখে গেছে । কী ভাবছে উৎসব? পালাবার কথা? হ্যাঁ ,সেদিন পালিয়ে গেলে আজ হয়তো প্রেমের মানেটাই অন্যরকম হত।
কান্নাটা প্রায় মুছে এসেছে। পলেস্তারা খসা দেওয়ালের দিকে তাকায় উৎসব। একটা মাকড়ষা কি সন্তর্পণে জাল বুনে চলে সেখানে। কেউ টের পায় না । একটু পরেই আর একটা উৎসব সেখানে ধরা পরবে। লাফাবে-ঝাঁপাবে। বোবাকালা ছেলের মতো শুধুই গোঙাবে ।
হঠাৎ একটা বেড়াল ধপ্ করে মেঝেতে লাফ দিয়ে পড়ে । ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে উৎসব। মুখতুলে এদিক-সেদিক চাওয়ার পর বেড়ালটি ডেকে ওঠে,"মিয়াও"। সমস্ত ঘরটা যেন কেঁপে ওঠে ।আশ্চর্য ! এরকম ভাবেই কিছু আগে কে যেন কাঁদছিল !ছাইছাইরঙা বেড়ালটির শুকনো মুখের দিকে তাকানো যায়না । চোখ দুটো ঈষৎ সিক্ত। সেখানে অশ্রু রেখা স্পষ্ট। বেড়ালও কাঁদে। অভিমানে সারাটাদিন কচুবন, ছেঁচিঘাট, ননিতলা একাকী ঘুরে বেড়িয়েছে। মালকিন চলে যায় যে !আর আসবেনা কখনও।
অন্য দিন হলে দৃশ্যটি হয়তো অন্যরকম হত। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দরজার হাক নিয়ে বেড়ালটিকে মারতে যেত উৎসব। পিছন পিছন ছুটত । কচুবন,ছেঁচিঘাট,ননিতলা পেরিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেত। অমনি ঘর থেকে ছুটে আসতো বেড়ালের মালকিন। আর বেঁধে যেত ঝগড়া। তুমুল। আড়ি হত। পাক্কা তিনদিন কথা বন্ধ ।
উৎসবের মুখে আর কোনওরকম আক্রমণের অভিব্যক্তি নেই ।ভাবলেশহীন চোখে বেড়ালের শুকনো মুখের দিকে চেয়ে থাকে ।বেড়ালটি এবারে এক লাফ মেরে বিছানায় ওঠে। আবার ডাকে,"মিয়াও"! উৎসব কাত হয়ে শোয় ।বেড়ালটি বুকের কাছে আসে। চাদরের উপর দিয়ে তার নরম তুলতুলে মুখ উৎসবের বুকে ঘষতে থাকে । তারপর হাত, পা, লেজ এক জায়গায় করে অমায়িক ভঙ্গীমায় শুয়ে পড়ে ।উৎসব হাও দিয়ে বেড়ালটিকে বুকের সাথে মৃদু চেপে ধরে ।সামনের দেওয়ালে তাকায় ।দেওয়ালটা ক্রমশ এবড়ো-খেবড়ো হয়ে আসে। কাঁপে । উৎসবের দু'গাল বেয়ে মুক্তোর মতো জলধারা নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে।
একটা মরাকান্না ফাঁকফোঁকড় সম্বল করে ঘরের দেওয়াল চুঁইয়ে পড়ছে । এ কান্না কিসের? এত করুণই-বা কেন? শ্যামলী আত্মঘাতী হলে তার মা এমনই শেষবার কেঁদেছিল। একমাত্র মেয়েটা ওই শীতের রাতে উঠানের চালতা গাছটাতে অভাবে ঝুলে থাকবে--তার মা ভাবতেই পারেনি ।
আধঘুম থেকে বিছানায় উঠে বসে উৎসব। হাতের কাছের চাদরটা কোনওমতে গায়ে জড়িয়ে ঘরের মেঝেতে দাঁড়ায়। তারপর কি এক অনিবার্য ডাকে সাড়া পেয়ে দরজার দিকে এগোয়। দরজা পেরিয়ে চিলেকোঠা, চিলেকোঠা পেরিয়ে উন্মুক্ত ছাদ। ছাদে আসতেই সে অনুভব করে কান্নাটা তাঁর শরীরের সবকটা রোম খাঁড়া করে দিয়েছে ।
ভোর চারটে। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে আবছা চাঁদের আলো। সদ্য সন্তান হারানো মায়ের ধুমায়মান চোখের মতো কুয়াশা থেকে বিন্দু বিন্দু জল অদ্ভুত এক শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ছে। মৃদু ,অথচ স্পষ্ট। পাতা ,ডাল বা নীড়ে জমা এ জল । মনে হয় এ ক্রন্দসী এক গোপন অভিসন্ধিতে মত্ত --এ তারই ফিসফিসানি। এছাড়া পৃথিবীটা ঘুমিয়েই। মানুষজন,গাছপালা, পশুপাখি--সব। এ অন্য পৃথিবী। অন্য কেউ । জন্ম থেকেই গম্ভীর হয়ে আছে। আর এই নীরবতা ভঙ্গ করে কে কাঁদে? শ্যামলীর মা রাতের অন্ধকারে পথে বসেই মাঝে-মধ্যে হাউমাউ করে কাঁদে । আবার হাসে । সেটা হাসি না কান্না তা বোঝা দায়। সেও তো ক'মাস হল চোখ বুজেছে ! তবে?
ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে অদূরস্থিত ল্যাম্পপোস্টের ধ্যাবড়ানো আলোর নীচে চোখ রাখে উৎসব। পরপর ক'টা টালির বাড়ি। কুয়াশার পিছনে অস্পষ্ট । সেখান থেকেই। সারাদিন মাইক,উলু-শঙ্খধ্বনি, ভিডিও---তারপর ঘুম। চরাচর ঘুমিয়ে।
ঘুমিয়ে থাকে সোমা-রুমা। ভোররাতে ওরা যেন বেশি ঘুমাতে ভালোবাসে ।কেউ জাগালে চটে যায়। ভীষণ। উৎসবের আবার শোওয়া খারাপ। ঘুমের ঘোরে এলোপাথারি হাত-পা ছোঁড়ে। খবরটা ফাস হয়ে যায়। শুনে তো দু'বোন হেসেই খুন ।উৎসব খুব লজ্জা পায়। এক হপ্তা ওবাড়ি মুখো হয়না। মুদীখানার দোকান থেকে নগদ কুড়ি টাকা দিয়ে একটা চটের বস্তা কিনে আনে, তাতে কোমর পর্যন্ত ঢুকিয়ে রাতের পর রাত শুয়ে থাকে,তবু বদ অভ্যাস কিছুতেই যায়না। আজও কি তারা ঘুমিয়ে?ঘোরের মধ্যে?
একটা ট্যাক্সি স্টার্টের শব্দ। কান্নাটা এবারে আরোও তীব্র, তীক্ষ্ণ ।কিছুটা সমবেত। তারই মধ্যে একটা করুণ কন্ঠের আঁচড়ে ফালাফাল হয়ে যাচ্ছে কুয়াশার হৃদয়। এ কান্না সোমার। কাঁদবেই তো। রুমা যে চলে যায় ।মা মারা যাবার পর সেই তো তাকে সন্তানের মতো আগলে রেখেছে। এমন কি উৎসবকেও ।হাতে হাত রেখে উৎসবকে কথা দিয়েছিল,বোনকে সে তাঁর হাতেই তুলে দেবে ।
একটা নারকীয় চিৎকার করে ট্যাক্সিটা কান্না ও উলু-শঙ্খধ্বনিকে পিছনে ফেলে অন্য জগতে অদৃশ্য হয়ে যায় । ম্যাজিক ! শব্দটার ক্রম অবলুপ্তির পরও নিষ্পলক চোখে এক ফোঁটাও জল এল উঁকি দিলনা ।পাথুরে চোখ ।পাথুরে হৃদয় ।পাথুরে শরীর । তবু সেই পাথরের গোপন ফাটল দিয়ে বিষাদের বারিপাত নৈঃশব্দ্যের ঝর্ণাধারায় ছড়িয়ে পড়ে পরিমন্ডলের আনাচে-কানাচে ।একটা ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে ভেসে যায় স্রোতে,একটা অভিমানী প্রণয়মুখর তলোয়ার মুহূর্তেই দু'ফালি করে পৃথিবীটাকে ,একটা পথ যেতে যেতে হঠাৎ কি এক নিষ্ঠুরতায় থমকে দাঁড়ায়,তারপর একটু বাঁক নিয়ে পথিককে সহসা এক চরম শূন্য ছায়াতলে রেখে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছুটা চোখরাঙানী ,কিছুটা অহং এর লড়াই,কিছুটা ভুলবোঝাবুঝি । প্রতিটা শব্দ যেন পিয়ানোর চাবির মতো সাজানো। কে বাজায় ? এত স্পর্ধা কার ? ভিতরটা তোলপাড় হয়ে যায় উৎসবের ।দু'হাতে কান চেপে সে একটা অস্ফূট আর্তনাদ করে,"আঃ"!
দুই
দরজা বন্ধ করে ঘরে আসে উৎসব। আলো জ্বালে ।চোখ ধাঁধিয়ে যায় ।দু'হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢাকবার চেষ্টা করে। যারা অন্ধকারে অভ্যস্ত তাদের ঠিক আলো সহ্য হয়না ।একটা পলায়নবাদী প্রবণতা সংক্রামক রোগের মতো আঁকড়ে ধরে । মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাত সরায় উৎসব। বিছানায় আসে। বালিশে মাথা রাখতেই অবাধ্য সৈনিকের মতো স্মৃতি ঢুকে পড়ে করোটীতে। সহসা কেঁপে ওঠে উৎসব ।চোখ বন্ধ করে। ঠোঁট কাঁপে। বিষাদ সেখানে একটা দৃঢ় চুম্বন রেখে গেছে । কী ভাবছে উৎসব? পালাবার কথা? হ্যাঁ ,সেদিন পালিয়ে গেলে আজ হয়তো প্রেমের মানেটাই অন্যরকম হত।
কান্নাটা প্রায় মুছে এসেছে। পলেস্তারা খসা দেওয়ালের দিকে তাকায় উৎসব। একটা মাকড়ষা কি সন্তর্পণে জাল বুনে চলে সেখানে। কেউ টের পায় না । একটু পরেই আর একটা উৎসব সেখানে ধরা পরবে। লাফাবে-ঝাঁপাবে। বোবাকালা ছেলের মতো শুধুই গোঙাবে ।
হঠাৎ একটা বেড়াল ধপ্ করে মেঝেতে লাফ দিয়ে পড়ে । ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে উৎসব। মুখতুলে এদিক-সেদিক চাওয়ার পর বেড়ালটি ডেকে ওঠে,"মিয়াও"। সমস্ত ঘরটা যেন কেঁপে ওঠে ।আশ্চর্য ! এরকম ভাবেই কিছু আগে কে যেন কাঁদছিল !ছাইছাইরঙা বেড়ালটির শুকনো মুখের দিকে তাকানো যায়না । চোখ দুটো ঈষৎ সিক্ত। সেখানে অশ্রু রেখা স্পষ্ট। বেড়ালও কাঁদে। অভিমানে সারাটাদিন কচুবন, ছেঁচিঘাট, ননিতলা একাকী ঘুরে বেড়িয়েছে। মালকিন চলে যায় যে !আর আসবেনা কখনও।
অন্য দিন হলে দৃশ্যটি হয়তো অন্যরকম হত। তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দরজার হাক নিয়ে বেড়ালটিকে মারতে যেত উৎসব। পিছন পিছন ছুটত । কচুবন,ছেঁচিঘাট,ননিতলা পেরিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেত। অমনি ঘর থেকে ছুটে আসতো বেড়ালের মালকিন। আর বেঁধে যেত ঝগড়া। তুমুল। আড়ি হত। পাক্কা তিনদিন কথা বন্ধ ।
উৎসবের মুখে আর কোনওরকম আক্রমণের অভিব্যক্তি নেই ।ভাবলেশহীন চোখে বেড়ালের শুকনো মুখের দিকে চেয়ে থাকে ।বেড়ালটি এবারে এক লাফ মেরে বিছানায় ওঠে। আবার ডাকে,"মিয়াও"! উৎসব কাত হয়ে শোয় ।বেড়ালটি বুকের কাছে আসে। চাদরের উপর দিয়ে তার নরম তুলতুলে মুখ উৎসবের বুকে ঘষতে থাকে । তারপর হাত, পা, লেজ এক জায়গায় করে অমায়িক ভঙ্গীমায় শুয়ে পড়ে ।উৎসব হাও দিয়ে বেড়ালটিকে বুকের সাথে মৃদু চেপে ধরে ।সামনের দেওয়ালে তাকায় ।দেওয়ালটা ক্রমশ এবড়ো-খেবড়ো হয়ে আসে। কাঁপে । উৎসবের দু'গাল বেয়ে মুক্তোর মতো জলধারা নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে।
Comments
Post a Comment