Skip to main content

অনূদিত গল্প ।। মার্কেজ




গভীর মনোবেদনায় সেই  তিন স্বপ্নচর
অথবা
তিন রাতচরা আর ওদের যা যা ভালোলাগত না

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস
মূলগল্প: Amargura Para tres sonambulos

ভাষান্তরঃ অমিতকুমার বিশ্বাস



গল্পটি গ্রেগরি রাবাস্যা ও জে এস বের্নস্টেইনের স্প্যানিশ থেকে অনুদিত ইংরেজি গল্প  ‘Bitterness fort Three Sleepwalkers’ থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। গল্পটির দ্বিতীয় নামকরণটি করেছেন তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়। 

          তাহলে তাঁকে বাড়ির এক কোনায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় পেলাম। বিশেষত তার জিনিসপত্র আনার আগে -অর্থাৎ তার কাপড়চোপড় যেগুলি থেকে সদ্য টুকরো করে কাটা কাঠের গন্ধ বের হচ্ছিল, কাদায় হাঁটার জন্য তাঁর ওজনহীন জুতো নিয়ে  আসার আগে কেউ একজন বলেছিল, এরকম মন্থর জীবনের সাথে সে মানিয়ে নিতে পারবে না, কারণ তাঁর সুস্থ রুচি কিংবা কোনো আকর্ষণ কিছুই নেই, থাকার মধ্যে   আছে কেবল জটার মতো এক কঠোর নিঃসঙ্গতা, যা তাঁকে সর্বদা তাড়া করে বেড়াত। আরেকজন বলেছিল- তাঁর একটা শৈশবও ছিল, যা মনে করতে আমাদের  বেশ কিছুটা  সময় লেগেছিল। হয়তো সে সময় তা আমরা বিশ্বাস করতে চাইনি; কিন্তু তাঁকে এক কোনায় ভয়ার্ত চোখে ঠোঁটের উপর আঙুল চেপে বসে থাকতে দেখে   হয়তো আমরা বিষয়টি মেনে নিয়েছি যে একদা তাঁর এক শৈশব ছিল; সে এমনই  স্পর্শকাতর ছিল যে সে বুঝতে পারতো বৃষ্টির পর ঠিক কেমন ঠান্ডা পড়বে, এমনকি নিজের শরীরের ভিতর সে সর্বদা এক অপ্রত্যাশিত ছায়ার নকশা বয়ে বেরাত।
       এই সবই, বরং আরোও  কিছু বেশি আমরা সেই বিকেলে বিশ্বাস করেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে ভয়ঙ্কর অন্তর্জগতের বাইরে সে এক সম্পূর্ণ মানবী। আমরা হঠাৎ এসব দেখলাম, যেন ভেতরে কোনও কাচের পাত্র ভেঙেছে, যখন তার   মানসিক যন্ত্রণা চিৎকার হয়ে বেরিয়ে আসছে, যখন সে আমাদের প্রত্যেককে নাম ধরে ডেকেছিল, যতক্ষণ না তাঁর পাশে বসছিলাম, সে কান্নার মধ্যে কথা বলছিল; আমরা  গান গাইতে ও হাততালি  দিতে শুরু করলাম, যেন আমাদের চিৎকার ভাঙা কাচের টুকরোগুলোকে পুনরায় জোড়া লাগাতে পারবে। ঠিক তখনই আমরা বিশ্বাস করতে পারলাম যে একসময় তাঁর একটা শৈশব ছিল। মনে হল যেন তাঁর চিৎকার কোনোকিছুর বিস্ময়কর প্রকাশ ছিল, যেন তাঁর  স্মৃতিপটে ভেসে উঠল বহুগাছ ও গভীর নদী। যখন সে উঠল, কিছুটা সে ঝুঁকে ছিল, আর আঁচল দিয়ে মুখটা না ঢেকেই , নাক না ঝেড়ে, আর চোখে জল এনেই সে আমাদের উদ্দেশ্যে বলল, আমি আর কখনও হাসব না।
                আমারা উঠোনে চলে গেলাম। আমরা তিনজনই তখন চুপচাপ।  হয়তো আমরা ভেবেছিলাম আমরা একই চিন্তায় আচ্ছন্ন। হয়তো আমরা ভেবেছিলাম  বাড়ির আলোগুলো না জ্বালানোই হবে একদন সঠিক কাজ। সে একা থাকতে চেয়েছিল, হয়তো সেই অন্ধকার কোণে, যেখানে বসে চুলের বিনুনি পাকাতে পাকাতে   তাঁর মনে হয়েছিল পশুতে পরিনত হওয়ার প্রক্রিয়ায় একমাত্র এই বিনুনিটিই টিকে   থাকবে।
           বাইরে উঠোনে পোকামাকড়ের ঘন গন্ধে আচ্ছন্ন হয়ে বসে থেকে আমরা তাঁর সম্পর্কে ভাবতে লাগলাম। এর আগেও ঢের বার আমরা এসব করেছিলাম। যেন আমরা বলতে পারতাম জীবনের প্রতিটা দিনই এই কাজটা করেছি।
তবুও সেই রাতটা একেবারে অন্যরকম ছিল। সে বলেছিল সে আর কখনও হাসবে না। আর আমরা যারা তাঁকে ভালোভাবে চিনতাম, নিশ্চিত হলাম যে আমাদের তাঁর দুঃস্বপ্নটা সত্যি হয়েছে। একটা ত্রিভুজের মতোই আমরা বসেছিলাম। কল্পনা করলাম সে এর মাঝখানে আছে।  অবাস্তব, অক্ষম সে কল্পনা।অন্তঃস্তলের যে ঘড়িগুলি তাঁর ধুলোয় পরিনত হবার ছন্দের খুটিনাটি হিসেব রাখছিল আমরা তার আওয়াজ শুনতে পাইনি। সমবেত ভাবে আমরা ভাবছিলাম, সাহস থাকলে আমরা তাঁর মৃত্যু কামনা করতাম। কিন্তু আমরা তাঁকে এমন এক কুৎসিত, হীমশীতল চেহারায় চেয়েছিলাম যা আমাদের গোপন ত্রুটিগুলো নিয়েই গড়ে উঠেছে।
        অনেকদিন আগে থেকেই আমরা প্রাপ্তবয়স্ক। আর সে ভাগ্যচক্রে এ-বাড়ির  জৈষ্ঠ্যা। সে রাতে সে আমাদের সঙ্গে সেখানে বসতে পারতো। হৃষ্টপুষ্ট ছেলেরা তাঁকে ঘিরে রাখতে পারত আর সে তারাদের হিসেবমতো  মিটমিট জ্বলা-নেভা অনুভব করতে পারত। কোনো সঠিক নাগরিকের স্ত্রী কিংবা কোনো শিষ্টাচারপূর্ণ পুরুষের রক্ষিতা হতে পারলে সে এ-বাড়ির শ্রদ্ধেয় নারীর মরযাদা পেত। কিন্তু সরল রেখার  মতোই সে একমাত্রিক জীবনের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে গেল, হয়তো এই কারণে তাঁর  জীবনের ভালো-মন্দ দিকগুলো কারো চোখে পড়েনি। বহুদিন ধরেই আমরা ব্যাপারটা জানতাম। এমনকি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তাঁকে পরমানন্দে উঠোনের মাটি কামড়াতে দেখে আমরা  অবাক হয়নি। তখন সে হেসে উঠল। আবার আমাদের দিকে চোখতুলে চাইল। সে দোতালার জানলা থেকে উঠোনের শক্ত মাটিতে পড়েছে। সেখানেই কিছুক্ষণ পড়ে রইল। কঠিন ও দৃঢ় হয়ে। মুখটা ভেজা মাটির দিকে  ফেরানো। কিন্তু আমরা পরে জানতে পেরেছিলাম যে  দূরত্ব বিষয়ক  আতঙ্ক অথবা শূন্যতার মুখোমুখি হওয়া নিয়ে ভয় একমাত্র তখনও তাঁর মধ্যে ছিল। আমরা কাঁধে  তুলে নিয়েছিলাম তাঁকে। প্রথমে তাঁকে যতটা শক্ত মনে হয়েছিল, ততটা শক্ত সে  ছিল না। বরং তাঁর শিথিল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ  আর ইচ্ছের বিরুদ্ধে শিথিল হয়ে এসেছিল, মনে হচ্ছিল যেন এক কবোষ্ণ মৃতদেহ যা তখনও শক্ত হয়ে ওঠেনি।
     তাঁর চোখদুটো খোলাই ছিল। মাটি মেখে যাওয়ায় মুখটা ময়লা হয়ে ছিল, যেন  ইতিমধ্যে কবরের মধ্যেকার স্বাদচাখা হয়ে গেছে। যখন তাঁকে রোদের দিকে ফেরালাম, মনে হল তাঁকে এক আয়নার দিকে ফিরিয়েছি। সে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে আমাদের দিকে চেয়েছিল। আমার হাতের উপর রাখা তাঁর লিবিডোশূন্য চাউনি তাঁর  অনুপস্থিতি বুঝিয়ে দিল। কেউ একজন বলল, সে মারা গেছে। কিন্তু তারপরেই তাঁর মুখে ফুটে উঠল সেই শীতল ও শান্ত হাসি যা রাতের বেলায় বাড়িটিকে জাগিয়ে রাখার  জন্য তাঁর মুখে লেগে থাকত। সে বলল যে সে জানেইনা কীভাবে সে উঠোনে গেল।  তবে সে জানাল যে সে নিজেকে উষ্ণ অনুভব করছে। একটা ঝিঁঝিঁপোকা এত তীক্ষ্ণভাবে ডাকছিল যে তাঁর মনে হল তাঁর ঘরের দেওয়ালটা ভেঙে পড়ে যাবে। ঠিক   সে-সময়ে সিমেন্টের মেঝেতে গাল ঠেকিয়ে রবিবারের প্রার্থনা তাঁর মনে পড়েগেল।  
        ঘটনাক্রমে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, সে কোনো প্রার্থনাই মনে করতে  পারে না, কারণ আমরা পরে দেখেছিলাম বাইরে থেকে ঝিঁঝিঁপোকার ধাক্কায় দেওয়াল পড়ে যেতে পারে এরকম ধারনায় ভেতর থেকে সে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ায় হারিয়ে গেছে তাঁর সকল সময়জ্ঞান; আর তখন নাকি কেউ দেওয়ালটা পাশে সরিয়ে রাখে আর তাঁকে কাঁধ ধরে বাইরে নিয়ে এসে রোদের দিকে মুখ করে শুইয়ে দেয়। 
      ওই রাতে উঠনে বসেই  আমরা জেনেছিলাম সে আর কখনও হাসবে না। হয়তো তার এক কোনায় আঁধারে ঘেরা ও স্বেচ্ছাকৃত যাপনে ভাবলেশহীন গাম্ভীর্য আমাদের পূর্বানুমানে কষ্ট দিয়েছিল। এটা আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল, যেভাবে  ঘরের সেই কোণে তাঁকে  সারাদিন বসে থাকতে দেখেছিলাম,যেখানে এখন সে বসে আছে। আর আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম সে বাড়িতে আর কখনও ঘুরে বেড়াবে না। প্রথমে তাঁকে বিশ্বাস করিনি। প্রথম কয়েক মাস সবসময় তাঁকে মাথা উঁচু করে  সারাটা ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে দেখেছিলাম, যদিও তাঁর কাঁধটা ঝুঁকে পড়েছিল। সে কখনও থামেনি, কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়েনি। রাতের বেলা দুই অন্ধকার কোনার  মধ্যে  তাঁর ভারী  শরীরের চলাফেরার শব্দ আমরা শুনতে পেতাম। আর আমরা বহুবার বিছানায় জেগে থাকতাম, শুনতাম তাঁর চুপিসারে হাঁটার শব্দ, আমদের কানগুলো তাঁকে সারাটা বাড়িময় অনুসরণ করে চলত। একবার সে আমাদের  বলেছিল যে সে আয়নার ভিতরে একটি ঝিঁঝিঁপোকাকে কঠিন স্বচ্ছতায় নিমজ্জিত অবস্থায় দেখেছিল, আর সেটা তাঁকে ধরার জন্য আয়নাকে  ভেদ করেছিল।  আমরা  সত্যিই বুঝতে পারিনি সে প্রকৃতপক্ষে কী বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা সবাই  দেখতে পেয়েছিলাম যে ভিজে পোশাক তাঁর গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছিল, যেন সে সবে কোনো চৌবাচ্চা থেকে উঠে এসেছে। এই প্রপঞ্চকে ব্যাখ্যার মধ্যে না গিয়ে আমরা ঠিক করে ফেললাম বাড়িথেকে পোকাগুলিকে দূর করতে হবে, যেগুলি তাঁকে আচ্ছন্ন কররে রেখেছে।
      আমরা দেওয়ালগুলো একে একে পরিষ্কার করলাম। উঠোনের গাছগাছালিগুলো কাটার ব্যবস্থা করা হল। এ যেন রাতের নৈঃশব্দ্য দূর করতেই আবর্জনা সাফ করলাম। কিন্তু আমরা আর তাঁর হাঁটার শব্দ পেলাম না, কিংবা ঝিঁঝিঁপোকা নিয়ে সে আর একটি কথাও বলত না। সেদিন পর্যন্ত এরকমই ঘটে, যেদিন খাওয়ার পর সে সিমেন্টের মেঝের উপর বসে আমাদের দিকে তাকাল, আর বলল, এই মেঝেতেই আমি বসে থাকব। আমরা শুনে কেঁপে উঠেছিলাম। কারণ আমরা দেখলাম যে তাঁকে ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ এক শবের মতো দেখাচ্ছে। 

             এ অনেকদিন আগের ঘটনা। এভাবেই আমরা এখানে বসে তাঁকে আধবোনা বিনুনিতে দেখতে দেখতে বেড়ে উঠেছি। দেখে মনে হত একাকীত্বে ডুব দিয়ে সে যেন আত্মঅস্তিত্ব বেমালুম হারিয়ে ফেলেছে। আর এ জন্যেই আমরা বুঝেছিলাম সে কখনও আর হাসবে না। আত্মবিশ্বাসের সাথে সে একথা আমাদের বলেছিল। আর তার সাথে এও বলেছিলসে আর হাঁটাচলা করবে না। ঠিক সেই মুহূর্তে  আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে এভাবে সে একদিন বলে উঠবে, আর কোনোওদিন আমি চোখে দেখতে পাব না',অথবা 'কখনও আমি আর শুনতে পাব না।' আমরা বুঝেছিলাম সে এমনই এক মহিলা যে স্বেচ্ছায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কাজকর্ম ত্যাগ করতে পারে। আর এভাবেই মুক্তচিত্তে সে নিজেকে শেষ করার দিকে নিয়ে চলে যেতে পারে। একেক করে সকল বোধভাষ্যি হারিয়ে সে সেই দিন পর্যন্ত যেতে পারে যে দিন আমরা দেখব তাঁর মাথা দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মনে হবে যেন জীবনে এই প্রথব বারের জন্য সে ঘুমিয়ে পড়েছে। এ-সব কিছু ঘটার জন্য হয়তো তখনও অনেক  সময় বাকি ছিল। কিন্তু উঠোনে বসে আমরা তিনজন শুনতে চাইছিলাম অকস্মাৎ ওই রাতের কাচ ভাঙা তাঁর তীক্ষ্ন কান্না। অনন্তপক্ষে আমাদের মধ্যে এক মায়াজালের জন্ম দিতে একটি শিশুবলতে গেলে একটি কন্যা শিশু বাড়টিতে জন্ম নিয়েছে,যেন বিশ্বাস করতে পারি তার নবজন্ম হয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

ছোটগল্প ।। ভূত , ভগবান এবং...

গল্পটি অচেনা যাত্রী -তে প্রকাশিত।  ছোটগল্প  ভূত, ভগবান এবং ... অমিতকুমার বিশ্বাস                       দুর্গানগর ছাড়তেই অন্ধকার নেমে এল। ভয়ে সিঁটিয়ে নুনি । ভাবছে কেউ চটকে খাবে। খুবলে খাবে। ঘামছে। দর দর করে। হাতের রুমালটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না সে । নাকটা দিব্বি   ফুলে যাচ্ছে। এবার হয়তো মাথাঘুরে পড়ে যাবে ...                       সবাইকে চমকে দিয়ে আলো এল কামরায় । মুখগুলো ভেসে ওঠে। সব। একে একে।    পাশের কাঁচাপাকা দাড়িমুখো , পিছনের টাকমাথাওয়ালা। এরকম আরও । লোকগুলো কত কাছে আবার কতদূরে। একদম ছবির মতো দেখতে পাচ্ছে সে । ছবিটা দেখতে দেখতে শান্ত হল মন। পরিচিত ছবি। একজন শুভানুধ্যায়ী ছবি থেকে উঠে এসে বল লেন , দিদিভাই লেডিসে আসতে পারেন কিন্তু ! মনে মনে নুনি বলে উঠল , আর লেডিস ! এদিকে ঘাম শুকিয়ে এসেছে। বুকের ধড়ফড়ানিও । থোকায় থোয়ায় ঝুলে থাকা একঘেয়ে আম আদমি। এইসব কার্বাইটে পরিপক্ক আম আদমির গন্ধ মাখতে মাখেতে নুনি চলে এসেছে বনগাঁ য় ।                         রাত । নুনি শুয়ে আছে বিছানায় । সবে রান্নাবানা খাওয়াদাওয়া সারল। ঘরে জিরো জ্বলছে। পাশে

ছোটগল্প ।। দৃষ্টি ।।

‘দৃষ্টি’ গল্পটি   ' রাত্রির হৃদয়ে এখন নীল শুঁয়োপোকা '   থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকাশিত হয়   ' অচেনা যাত্রী’-তে - এ ,   ২০ ১৩ -এ।   ' ইতিকথা এখন ' (ISSN: 2394-1456)-এর বইমেলা-২০১৫ সংখ্যাটিতে বিশিষ্ট কবি বিভাস রায়চৌধুরী লিখেছেন ,"' সাপ’ ও ‘দৃষ্টি’ গল্পের মধ্যেও ভাস্কর্য মূলক নির্মিতির ছাপ টের পাই। বোঝা যায়, গল্পের বিষয় শুধু নয়, গল্পের আঙ্গিক নিয়েও অমিত চর্চা করতে চায়।”   দৃষ্টি অমিতকুমার বিশ্বাস               পথটা সরু । দু ' পাশে সারি সারি গাছ । ঘন। একটা বিন্দুতে এসে মিসেছে । আর সেদিকেই দৃষ্টি । পথে নয় , পথের উপর হেঁটে যাওয়া এক নদীর উপর । নদী ? হ্যাঁ নদী।রূপসা । সে - তো নদীর - ই নাম । নদীর মতোই ঢেউ খেলে যায় ।ছোঁয়া   লাগলেই কাঁটা দেয় ।পবিত্র হয় শরীর । নদীতেই তো পাপমোচন । শাপমোচনও ।            রূপসা এবারে ছোটে। প্রকান্ড ঢেউ । মাটি কাঁপে। প্রথমে মৃদু । পরে বাড়ে ।বেড়ে যায় । ক্রমশ । এ এক মানানসই   চলন । সম্মুখে সমুদ্র । ঘাসবনের ।এখানেই সঙ্গম । সুতীব্র। রূপসা এবারে পিছনে তাকায়। হরিণীর মতো । বঙ্কিম গ্রীবা । হেলানো নিতম্ব। অম

ছোটগল্প ।। রবীন্দ্রনাথ ।। অমিতকুমার বিশ্বাস ।।

'রবীন্দ্রনাথ'  গল্পটি 'রাত্রির হৃদয়ে এখন নীল শুঁয়োপোকা' থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকাশিত হয় 'ঋতমঞ্জরী'-তে, ২০০৯-এ, সেখানে দ্বিতীয় পদ্যটি অন্যরকম ছিল, আর তৃতীয় পরবটি ছিল না। 'ইতিকথা এখন' (ISSN:2394-1456)-এর বইমেলা-২০১৫ সংখ্যাটিতে বিশিষ্ট কবি বিভাস রায়চৌধুরী লিখেছেন,"'রবীন্দ্রনাথ' গল্পে শ্লেষরসের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে অমিত। সময় এখানে যথার্থ নাটকীয়। অনেক কবিতায় কাহিনি যেমন বৃহৎ কিছুকে নির্দেশ করে, 'রবীন্দ্রনাথ' গল্পেও তেমনই প্রতীক ভেঙে জীবন্ত হয়ে উঠতে চাইছে লেখকের যন্ত্রণা, নিষ্ঠুর সমাজসত্য।"  রবীন্দ্রনাথ অমিতকুমার বিশ্বাস               তিনটি রাস্তা তিনদিকে ছুটে চলেছে । ত্রিমাথায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ । শুভ্র মর্মর মূর্তি । সেই সাত দশক ধরে দন্ডায়মান এক বৃদ্ধ । চতুর্দিকে কত পরিবর্তন ।বৃদ্ধেরও হয়েছে ।তবে যা হয়েছে তা সবই নেতিবাচক । সাদাচুল , সাদাদাড়ি - এখন সবই হলদেটে ।অনেক কিছুই সয়েছে মূর্তিটি । প্রবল বন্যা , আয়লা ইত্যাদি ।সেদিনের ঝড়ে মূর্তিটি প্রায় ভেঙেই যাচ্ছিল । প্রকান্ড ডালটা সামনেই পড়ল ।বৃদ্ধ তবু নির্বিকার ।তা