‘দৃষ্টি’ গল্পটি 'রাত্রির হৃদয়ে এখন নীল শুঁয়োপোকা' থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকাশিত হয় 'অচেনা
যাত্রী’-তে-এ, ২০১৩-এ। 'ইতিকথা এখন' (ISSN:2394-1456)-এর বইমেলা-২০১৫ সংখ্যাটিতে বিশিষ্ট কবি
বিভাস রায়চৌধুরী লিখেছেন,"'সাপ’ ও ‘দৃষ্টি’
গল্পের মধ্যেও ভাস্কর্য মূলক নির্মিতির ছাপ টের পাই। বোঝা যায়, গল্পের বিষয় শুধু
নয়, গল্পের আঙ্গিক নিয়েও অমিত চর্চা করতে চায়।”
দৃষ্টি
অমিতকুমার বিশ্বাস
পথটা সরু। দু'পাশে সারি সারি গাছ। ঘন। একটা বিন্দুতে এসে মিসেছে। আর সেদিকেই দৃষ্টি। পথে নয়, পথের উপর হেঁটে যাওয়া এক নদীর উপর । নদী? হ্যাঁ নদী।রূপসা। সে-তো নদীর-ই নাম। নদীর মতোই ঢেউ খেলে যায় ।ছোঁয়া লাগলেই কাঁটা দেয় ।পবিত্র হয় শরীর। নদীতেই তো পাপমোচন । শাপমোচনও।
রূপসা এবারে ছোটে। প্রকান্ড ঢেউ। মাটি কাঁপে। প্রথমে মৃদু। পরে বাড়ে ।বেড়ে যায় । ক্রমশ । এ এক মানানসই চলন। সম্মুখে সমুদ্র। ঘাসবনের ।এখানেই সঙ্গম। সুতীব্র। রূপসা এবারে পিছনে তাকায়। হরিণীর মতো। বঙ্কিম গ্রীবা। হেলানো নিতম্ব। অমায়িক মুদ্রায়। এরকম চৌকশ মৃৎশিল্পী ইদানিং খুব একটা চোখে পড়ে না । মাটির সংগে পিরীতেই তৈরি মৃন্ময়ী। অসম্পূর্ণ। অথচ পূর্ণাঙ্গ। অনুভবে। অন্তত হৃদয়ঙ্গমের কাছে তো বটেই ।
---এসো ।
চোখে তাঁর পাকা ধানের ভাষা ।ঠোঁটে ঘুমিয়ে পড়া পুকুরের মৃদু স্পন্দন ।চুলে ঘরে ফেরা সহশ্র পাখির উল্লাস ।
----এসোনা।
মৃদু হাসি ।সে-ই মুদ্রায় । তবে আরোও অপরূপ । শ্রাবণের মতোই ।এবারে এক অলৌকিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যায় হৃদয়ঙ্গম ।
---দ্যাখো ।সামনে ।
--কী?
--ঘাসবন ।
--ঘাসবন?
--হ্যাঁ ।আর নদী ।
--নদী ?কোথায়?
--ওই তো,সামনেই ।
--ও । ও- তো মুমূর্ষ ।মানুষ যে খেয়ে ফেলেছে ।
--না।
--না?
--হ্যাঁ।
--হ্যাঁ?
--হ্যাঁ বাবা । ওটাই নদী । নদীযে অমর ।
--ধুস্ ।কী যে বলনা ।নদীতো হারিয়ে যায় ।
--না।
--না?
--হ্যাঁ । নদীকথা শ্বাশত ।
--অ্য ! হঠাৎ রোমান্টিকতা ? কারণ আছে?
--আছে ।
--কী সে ?
--তুমি চেষ্টা কর ,দেখি পার কি-না !
--নদী চলছে ।মৃৎশিল্পী গড়ছে ।পিরীত চলছে । জলের সঙ্গে মাটির আর মাটির সঙ্গে জলের ।অলৌকিক ভাবে ।আর এখন সঙ্গম ।দ্যাখো চেয়ে--
--ধ্যাৎ !
বলেই লজ্জা পেল রূপসা। পাশাপাশি না-দাঁড়িয়ে এবারে দুজন ঘাসবনের দু'দিকে চলে গেল । রূপসার হাঁটু ডুবে গেল । কোমরও । আরো উপরে ।এবারে সাঁতার দিচ্ছে । শাড়িটা লেপ্টে । উন্মাদের মতো দৃষ্টি আবার সেদিকেই । রূপসা ডুবে গেল । ঘাসে । ধীরে ধীরে । ঘাসের নীচে। প্রবল ঢেউ । হৃদয়ঙ্গম ডাকলো। সাড়া নেই । অবশেষে সম্মুখে দৃশ্যমান নদীচর। আদুরে ওষ্ঠদ্বয়কে সে রাখলো সেখানেই,আর মুহূর্তেই উলটে গেল নিটোল নদীচর। অগত্যা মুখ তুলে নিল হৃদয়ঙ্গম ।সহসা দুটি মায়াবী হাত ক্রমশ হারিয়ে গেল হৃদয়ঙ্গমের চুলে । ধীরে ধীরে ডুবে গেল চোরাবালির নীচে। আরো আরো নীচে।
দুই
হৃদয়ঙ্গমের হুঁশ এল। মদের মাত্রাটা কী আজ একটু বেশি-ই হয়েছিল ? কী দেখেছে সে ? কী কী কী ? একটা হাত? দুটো? তিনটে? সরু সরু? নগ্ন? নখরযুক্ত? তাকে তাঁর থেকেই লুটে-পুটে নিতে এসেছে ? কী কী কী ?
হৃদয়ঙ্গম উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে। পারে না । ফট্ করে পড়ে যায় ।বেহুঁশ গান্ডুর মতো। পুরোনো তক্তাপোশে নখে ফালাফাল পিঠ-বুক-গাল। শরীরটা ভীষণ এক ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠে মৃগি রোগীর মতো। রোগা রোগা নগ্ন হাতদুটি তাঁর শরীরটাকে পুটলি বানিয়ে শেঁক নিচ্ছে অবিরাম। হঠাৎ বৃষ্টি নামে। জানলার বৃষ্টিবিন্দুতে আটকে যায় শীৎকার। মাখামাখি করে কাঁচের দেওয়াল বেয়ে নামছে নীল শুঁয়োপোকার মতো। ধীরে ধীরে।
হঠাৎ পুটলিটাকে ছিটকে ফেলে দেয় রুগ্ন হাতদুটো। অসহায় পুটলিটা গড়াগড়ি খায় জানলার পাশে। জানলায় করুণ দৃষ্টি। ঘোলাটে জ্যোৎস্না মেশানো ।বৃষ্টিবিন্দু ঠিক যেন কোন এক মৃৎশিল্পীর তৈরি। হেলানো নিতম্ব। নদীচর। এখানে? কী যা-তা ! নদী? জানলায় ? ছুঁতে চায় হৃদয়ঙ্গম । ঠোঁট রাখতে চায় । হয়তো যন্ত্রীর অবাধ্য ঠোঁটের ছোঁয়ায় স্পর্শকাতর স্বপ্নের বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠবে নৈসর্গিক উল্লাসে । সেখানেই দৃষ্টি । নক্সাকাটা । ঘাসে শুয়ে পড়ে। অতঃপর ডুবে যায় ঘাসের সমুদ্রে । হৃদয়ঙ্গমের শূন্য দৃষ্টি। সেথায় বৃষ্টি নামে। জানলার ওপাশে বৃষ্টি। ঘোলাটে। এ-পাশেও। কেউ কাউকে ছুঁতে পারেনা। পারে না। না না না।
সহসা দুটো রুগ্ন হাত উঠে আসে বিছানার কবর থেকে। টানতে টানতে নিয়ে যায় পুটলিটাকে। কেবল অসহায় দৃষ্টি পড়ে থাকে জানালায়। রূপসা নদীর পানে ।
পথটা সরু। দু'পাশে সারি সারি গাছ। ঘন। একটা বিন্দুতে এসে মিসেছে। আর সেদিকেই দৃষ্টি। পথে নয়, পথের উপর হেঁটে যাওয়া এক নদীর উপর । নদী? হ্যাঁ নদী।রূপসা। সে-তো নদীর-ই নাম। নদীর মতোই ঢেউ খেলে যায় ।ছোঁয়া লাগলেই কাঁটা দেয় ।পবিত্র হয় শরীর। নদীতেই তো পাপমোচন । শাপমোচনও।
রূপসা এবারে ছোটে। প্রকান্ড ঢেউ। মাটি কাঁপে। প্রথমে মৃদু। পরে বাড়ে ।বেড়ে যায় । ক্রমশ । এ এক মানানসই চলন। সম্মুখে সমুদ্র। ঘাসবনের ।এখানেই সঙ্গম। সুতীব্র। রূপসা এবারে পিছনে তাকায়। হরিণীর মতো। বঙ্কিম গ্রীবা। হেলানো নিতম্ব। অমায়িক মুদ্রায়। এরকম চৌকশ মৃৎশিল্পী ইদানিং খুব একটা চোখে পড়ে না । মাটির সংগে পিরীতেই তৈরি মৃন্ময়ী। অসম্পূর্ণ। অথচ পূর্ণাঙ্গ। অনুভবে। অন্তত হৃদয়ঙ্গমের কাছে তো বটেই ।
---এসো ।
চোখে তাঁর পাকা ধানের ভাষা ।ঠোঁটে ঘুমিয়ে পড়া পুকুরের মৃদু স্পন্দন ।চুলে ঘরে ফেরা সহশ্র পাখির উল্লাস ।
----এসোনা।
মৃদু হাসি ।সে-ই মুদ্রায় । তবে আরোও অপরূপ । শ্রাবণের মতোই ।এবারে এক অলৌকিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যায় হৃদয়ঙ্গম ।
---দ্যাখো ।সামনে ।
--কী?
--ঘাসবন ।
--ঘাসবন?
--হ্যাঁ ।আর নদী ।
--নদী ?কোথায়?
--ওই তো,সামনেই ।
--ও । ও- তো মুমূর্ষ ।মানুষ যে খেয়ে ফেলেছে ।
--না।
--না?
--হ্যাঁ।
--হ্যাঁ?
--হ্যাঁ বাবা । ওটাই নদী । নদীযে অমর ।
--ধুস্ ।কী যে বলনা ।নদীতো হারিয়ে যায় ।
--না।
--না?
--হ্যাঁ । নদীকথা শ্বাশত ।
--অ্য ! হঠাৎ রোমান্টিকতা ? কারণ আছে?
--আছে ।
--কী সে ?
--তুমি চেষ্টা কর ,দেখি পার কি-না !
--নদী চলছে ।মৃৎশিল্পী গড়ছে ।পিরীত চলছে । জলের সঙ্গে মাটির আর মাটির সঙ্গে জলের ।অলৌকিক ভাবে ।আর এখন সঙ্গম ।দ্যাখো চেয়ে--
--ধ্যাৎ !
বলেই লজ্জা পেল রূপসা। পাশাপাশি না-দাঁড়িয়ে এবারে দুজন ঘাসবনের দু'দিকে চলে গেল । রূপসার হাঁটু ডুবে গেল । কোমরও । আরো উপরে ।এবারে সাঁতার দিচ্ছে । শাড়িটা লেপ্টে । উন্মাদের মতো দৃষ্টি আবার সেদিকেই । রূপসা ডুবে গেল । ঘাসে । ধীরে ধীরে । ঘাসের নীচে। প্রবল ঢেউ । হৃদয়ঙ্গম ডাকলো। সাড়া নেই । অবশেষে সম্মুখে দৃশ্যমান নদীচর। আদুরে ওষ্ঠদ্বয়কে সে রাখলো সেখানেই,আর মুহূর্তেই উলটে গেল নিটোল নদীচর। অগত্যা মুখ তুলে নিল হৃদয়ঙ্গম ।সহসা দুটি মায়াবী হাত ক্রমশ হারিয়ে গেল হৃদয়ঙ্গমের চুলে । ধীরে ধীরে ডুবে গেল চোরাবালির নীচে। আরো আরো নীচে।
দুই
হৃদয়ঙ্গমের হুঁশ এল। মদের মাত্রাটা কী আজ একটু বেশি-ই হয়েছিল ? কী দেখেছে সে ? কী কী কী ? একটা হাত? দুটো? তিনটে? সরু সরু? নগ্ন? নখরযুক্ত? তাকে তাঁর থেকেই লুটে-পুটে নিতে এসেছে ? কী কী কী ?
হৃদয়ঙ্গম উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে। পারে না । ফট্ করে পড়ে যায় ।বেহুঁশ গান্ডুর মতো। পুরোনো তক্তাপোশে নখে ফালাফাল পিঠ-বুক-গাল। শরীরটা ভীষণ এক ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠে মৃগি রোগীর মতো। রোগা রোগা নগ্ন হাতদুটি তাঁর শরীরটাকে পুটলি বানিয়ে শেঁক নিচ্ছে অবিরাম। হঠাৎ বৃষ্টি নামে। জানলার বৃষ্টিবিন্দুতে আটকে যায় শীৎকার। মাখামাখি করে কাঁচের দেওয়াল বেয়ে নামছে নীল শুঁয়োপোকার মতো। ধীরে ধীরে।
হঠাৎ পুটলিটাকে ছিটকে ফেলে দেয় রুগ্ন হাতদুটো। অসহায় পুটলিটা গড়াগড়ি খায় জানলার পাশে। জানলায় করুণ দৃষ্টি। ঘোলাটে জ্যোৎস্না মেশানো ।বৃষ্টিবিন্দু ঠিক যেন কোন এক মৃৎশিল্পীর তৈরি। হেলানো নিতম্ব। নদীচর। এখানে? কী যা-তা ! নদী? জানলায় ? ছুঁতে চায় হৃদয়ঙ্গম । ঠোঁট রাখতে চায় । হয়তো যন্ত্রীর অবাধ্য ঠোঁটের ছোঁয়ায় স্পর্শকাতর স্বপ্নের বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠবে নৈসর্গিক উল্লাসে । সেখানেই দৃষ্টি । নক্সাকাটা । ঘাসে শুয়ে পড়ে। অতঃপর ডুবে যায় ঘাসের সমুদ্রে । হৃদয়ঙ্গমের শূন্য দৃষ্টি। সেথায় বৃষ্টি নামে। জানলার ওপাশে বৃষ্টি। ঘোলাটে। এ-পাশেও। কেউ কাউকে ছুঁতে পারেনা। পারে না। না না না।
সহসা দুটো রুগ্ন হাত উঠে আসে বিছানার কবর থেকে। টানতে টানতে নিয়ে যায় পুটলিটাকে। কেবল অসহায় দৃষ্টি পড়ে থাকে জানালায়। রূপসা নদীর পানে ।
Comments
Post a Comment